শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ১৯:১৭

স্বপ্নের পদ্মা সেতু : মৎস্য বাণিজ্যে সুদিনের প্রহর গুণছেন বরগুনার এক তৃতীয়াংশ মানুষ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু : মৎস্য বাণিজ্যে সুদিনের প্রহর গুণছেন বরগুনার এক তৃতীয়াংশ মানুষ

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত। সাগর থেকে আহরণের পরে মাছ এখানেই নিয়ে আসেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক জেলে। জেলার এক তৃতীয়াংশ মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মৎস্য বাণিজ্যে জড়িত। তারা সুদিন ফেরার আশায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রহর গুনছেন।বরগুনা মৎস্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী জেলার ছয় উপজেলায় নিবন্ধিত প্রায় ৪১ হাজার সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী এদের সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে জেলায় মৎস্য চাষ, উৎপাদন, আহরণ ও বিপননের সহজলভ্যতায় মৎস্যজীবীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সাগর, নদী থেকে মাছ আহরণসহ স্থানীয়ভাবে মাছ চাষাবাদ ও উৎপাদনের সঙ্গে জেলার এক তৃতীয়াংশ মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
 
তালতলী মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি দুলাল ফরাজি জানান, সেতুটি উদ্বোধন হলে মৎস্য ব্যবসায় আমুল পরিবর্তন আসবে। যার সুফল পাবেন পাইকার থেকে শুরু করে প্রান্তিক জেলে পর্যন্ত। বাড়বে রাজস্ব আদায়।বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরি জানিয়েছেন, দেশে সামুদ্রিক মাছের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এ অবতরণ কেন্দ্রের মাছ সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু ফেরিঘাটে যানজটের কারনে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় নষ্ট হতো মাছ। কমে যেতো মাছের দাম।মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে বাড়বে মাছের দাম। মাছের দাম নিয়ে জেলে, ব্যবসায়ীদের আর হতাশ হতে হবে না।
 
ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি জানান, ফেরিঘাটে যানজটের কারনে সাগরে মাছ শিকার করে ফিরে আসা অনেক ট্রলার আসে না পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে শিকার করা মাছ বিক্রির জন্য অধিকাংশ ট্রলার আসবে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। ফলে বাড়বে এ অবতরণ কেন্দ্রের রাজস্ব আদায়।পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ অবতরণ কেন্দ্রে প্রায় ২৫ হাজার টন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে। যার অর্ধেকই ইলিশ। অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করা মাছের উপর শতকরা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় করে সরকার। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নতির পর মৎস্য বিপননে রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
 
উপকূলীয় বরগুনা জেলায় সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষাবাদ হয়ে থাকে। পাশাপাশি পায়রা নদী ও বিষখালী নদ এবং প্রচুর খাল-বিলে মাছধরা জেলের সংখ্যাও অনেক। চাষ করা ও নদী থেকে আহরিত সুস্বাদু মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে চালান করা হয়। ফেরিঘাটে সময়ক্ষেপণের কারনে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পদ্মার ওপাড়ে মাছ চালানে উৎসাহী হতেন না। কিন্তু প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে তারা নতুন করে উদ্দ্যেমী হচ্ছেন পদ্মার ওপারে মাছ চালানে, জানালেন আড়তদার খলিলুর রহমান।আমতলী শহরের আড়তদার জাকির হোসেন জানান, শুধু মাছ চালানই নয়, যে সকল মাছ এখানে কম পাওয়া যায়, তা পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে বরগুনাতে আমদানি করে আমরা আরও লাভবান হতে পারবো।
 
মৎস্য বিভাগের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার জানিয়েছেন, এমনিতেই এ জেলার মানুষ সৌখিনভাবে ও বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষাবাদ করে থাকেন। তবে তার বিপনন ব্যাবস্থা বরিশাল ও খুলনা বিভাগেই সীমাবদ্ধ ছিলো। পদ্মা সেতু চালু হলে বিপনন ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন আসবে। অনেক নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব জানান, সামুদ্রিক ও স্থানীয় নদী এবং জলাশয়ের মাছের উপরে বরগুনা বিশাল একটা জনগোষ্ঠির জীবিকা নির্ভরশীল। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বরগুনার মৎস্য সেক্টর এতোদিন আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। যার প্রধানতম কারণ ছিলো রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে বিলম্ব ও সময়ক্ষেপণ। পদ্মা সেতু চালু হলে বরগুনার মৎস্যজীবীদের ভাগ্যসহ আর্থসামাজিক অবস্থার একটা বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK