শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৫:৫১
ব্রেকিং নিউজ

দেশজুড়ে গুরুদাসপুরের লিচুর কদর

দেশজুড়ে গুরুদাসপুরের লিচুর কদর

উত্তরণবার্তা  প্রতি‌বেদক : লিচুর ভারে নুয়ে পড়েছে বেশি ভাগ গাছ। চারিদিকে লিচুর মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ। গাছের ডালে ডালে ভিড় করেছে মৌমাছি। গাছ থেকে নামানো হচ্ছে লিচু। আর সেগুলো বাছাই শেষে গুণে গুণে করা হয় আটি (বোটাসহ)। এরপর এসব লিচু ঝুড়িতে সাজিয়ে বিক্রির জন্য ভ্যানে করে নেয়া হচ্ছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর বটতলার আড়তে। ১৩ মে শুক্রবার গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। গাছ থেকে লিচু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও শ্রমিকরা। সেসব লিচু বাছাইয়ের কাজ করছেন নারী-পুরুষ সবাই মিলে। বৈশাখ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয় লিচু সংগ্রহের কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আড়তগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কর্মব্যস্ততা। বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে লিচু কিনে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। এ অঞ্চলের আবহাওয়া লিচুর জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। এখানকার লিচু রসালো ও স্বাদ বেশি হওয়ায় এর সুনাম রয়েছে সারাদেশ জুড়ে। এই কারণে নাজিরপুর ইউনিয়নের কানু ব্যাপারীর বটতলার ২০০১ সালে গড়ে উঠে এক বিশাল লিচুর আড়ত। ফলে স্থানীয় অনেক যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগও হয়েছে। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে নাটোর জেলায় ৯২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নাটোর সদরে ১৬০ হেক্টর, গুরুদাসপুর উপজেলায় ২১০টি বাগানে ৪১০ হেক্টর, নলডাঙ্গা উপজেলায় ১৫ হেক্টর, সিংড়া উপজেলায় ৯৮ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৪০ হেক্টর, লালপুর উপজেলায় ১০৫ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৯৬ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। 
 
 
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুরে লিচু বাগান মালিক মো. জুনাইদ আহমেদ বলেন, আমার তিন বিঘা জমিতে ৩০টি গাছ রয়েছে। এ মৌসুমে লিচুর বেশ ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে লিচুর আকার ছোট হয়েছে। আড়তগুলোতে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা দরে লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। ফল বিক্রেতা সাদেক আলী  বলেন, ‘এ বছর চন্দ্রপুর এলাকায় ২৫টি গাছ কিনেছি। সব গাছে লিচু এখনো পোক্ত হয়নি। বর্তমানে একশত লিচু ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের কাছে স্থানীয় লিচুর চাহিদা বেশি। কারণ এই লিচুতে কোনো ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার করেন না গাছ মালিকরা।’একজন লিচু ক্রেতা অসীম ঘোষ বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় লিচু স্বাদে ভালো, মিষ্টি আছে। দামও সহনীয়।’ উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর এলাকার বাগান মালিক মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ফল ভালো হয়েছে। আমার চার বিঘা জমিতে লিচু রয়েছে। প্রতিটি গাছে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার করে লিচু হবে। বর্তমানে যে দাম আছে, সে দাম থাকলে আমি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ করতে পারবো।’ একই গ্রামের গৃহিণী মোসা মিতু বেগম বলেন, ‘এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টির অভাবে ফল ছোট। যদি এই লিচুর দাম কিছুটা বাড়ে, তাহলে আমরা লাভবান হবো।’ নাজিরপুর ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের বাগান মালিক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর খরার কারণে লিচুর আকার ছোট হয়েছে। তবে বাজারে লিচুর দাম মোটামোটি ভাল। আশা করছি বাগানের সব খরচ বাদে কিছু টাকা আয় করতে পারবো।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, এ বছর নাটোরে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর ফলন বেশ ভাল হয়েছে। কৃষকরা গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ শুরু করেছে। বাজারে ভাল দামও পাচ্ছে। জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় লিচুর আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের লিচু বেশ রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় সারাদেশে পরিচিত রয়েছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ