শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২১:২৯
ব্রেকিং নিউজ

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করলা, জানুন এর অসংখ্য ঔষধি গুণাগুণ সম্বন্ধে

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করলা, জানুন এর অসংখ্য ঔষধি গুণাগুণ সম্বন্ধে

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
‘করলা’ এই শব্দটি শুনলেই মুখে একটা তেতো ভাব চলে আসে, যা অনেকের কাছে প্রিয় আবার অনেকের কাছে বিস্বাদ। তবে এর স্বাদ ভাল লাগুক বা না লাগুক, করলা বা উচ্ছের আছে অনেক গুণাগুণ। এতে আছে পালং শাকের তুলনায় দ্বিগুণ ক্যালসিয়াম, ব্রকলির চেয়ে দ্বগুণ বেটা ক্যারোটিন এবং কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম। তাই খাদ্য তালিকায় এই সব্জিটি রাখা অপরিহার্য। আজ আমি আপনাদের বলব করলার ৬টি উপকারিতা সম্বন্ধে যা গবেষণায় প্রমাণিত।
 
১। পুষ্টিগুণে ভরপুরে করলা
প্রয়োজনীয় পরিপোষক পেতে করলা একটি উৎকৃষ্ট উৎস। 
১০০ গ্রাম করলায় আছেঃ
  • ক্যালরি - ২০
  • শর্করা - ৪ গ্রাম
  • ফাইবার - ২ গ্রাম
  • ভিটামিন সি - দিনের চাহিদার ৯৩%
  • ভিটামিন এ - দিনের চাহিদার ৪৪%
  • ফোলেট - দিনের চাহিদার ১৭%
  • পটাশিয়াম - দিনের চাহিদার ৮%
  • জিঙ্ক - দিনের চাহিদার ৫%
  • আয়রন - দিনের চাহিদার ৪%
করলায় আরও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যাটেচিন (Catechin), গ্যালিক এসিড (Gallic acid), এপিক্যাটেচিন (Epicatechin), এবং ক্লোরোজেনিক এসিড (chlorogenic acid) নামক শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
 
২। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে করলা
করলায় আছে শক্তিশালী ঔষধি গুণাবলী। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করলা ব্লাড সুগার কমাতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের উপর চালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪ সপ্তাহ ব্যাপি প্রতিদিন ২,০০০ মিলিগ্রাম করলা খেলে ব্লাড সুগার বেশ ভাল পরিমাণে হ্রাস পায়। এছাড়া করলা ফ্রুক্টোসামিন (fructosamine) এর মাত্রায় কমায়। 
 
৩। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে করলা
গবেষণায় দেখা গেছে করলার কিছু উপাদান আছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। একটি গবেষণায় দেখা যায় করলার নির্যাস পাকস্থলি, মলাশয় (কোলন), এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, করলার নির্যাস স্তন ক্যান্সারের বৃদ্ধি এবং ক্যান্সারের কোষ ছড়িয়ে পড়া রোধ করে এবং ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে।
 
৪। কোলেস্টেরল কমায় করলা
পশুর উপর চালিত বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করলা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদপিন্ড সুস্থ রাখে। একটি গবেষণায় ইঁদুরকে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খাওয়ানোর পর করলার নির্যাস খেতে দেয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায় এদের টোটাল কোলেস্টেরল, এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল, এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা অনেক বেশী কমেছে।
 
৫। করলা ওজন কমাতে সহায়ক
ওয়েট লস ডায়েটে করলা একটি উৎকৃষ্ট সংযোজন, কারণ এতে আছে অনেক কম ক্যালরি কিন্তু অনেক বেশী ফাইবার। ফাইবার আমাদের পরিপাক নালী দিয়ে খুব ধীর গতিতে চলাচল করে ফলে ক্ষুধা ও খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। গবেষকদের মতে উচ্চ মাত্রার ক্যালরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে করলা খেলে ফাইবার গ্রহণ বৃদ্ধি পাবে, ক্যালরি গ্রহণ কমবে, এবং ওজন হ্রাস পাবে।
 
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করলা চর্বি গলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন ৪.৮ গ্রাম করলার নির্যাস দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল প্রতিদিন খেলে পেটের মেদ অনেক পরিমাণে কমে।
 
৬। ত্বকের যত্নে করলা
করলায় থাকা ভিটামিন ও খনিজ ত্বক সন্দর রাখে। এছাড়া ব্রণ সারাতে ম্যাজিকের মত কাজ করে করলা। সবজি হিসেবে, জুস করে,স্ন্যাকস হিসেবে যেকোন ভাবেই আপনি করলা খেতে পারেন।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK