সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
হিমোগ্লোবিন এক ধরণের প্রোটিন যা আমাদের রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় থাকে। এই লোহিত রক্ত কণিকা (red blood cells) শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এবং কোষ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ফুসফুসে পৌঁছে দেয় এবং ফুসফুস সেটা শরীর থেকে বের করে দেয়।
যেসব কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হতে পারেঃ
-
আয়রন ঘাটতি জনিত এনিমিয়া
-
গর্ভধারণ
-
লিভারের রোগ
-
ইউরিন ইনফেকশন
এছাড়া কোন কারণ ছাড়াই কারও কারও রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকতে পারে। আবার অনেক মানুষ আছেন যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কম কিন্তু কোন উপসর্গ নেই। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে আয়রন বা লোহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে প্রথমে যা করতে হবে সেট হল আয়রন সমৃদ্ধ খাবা খাওয়া, যেমনঃ
-
গরুর কলিজা, গিলা, ফ্যপসা ইত্যাদি
-
গরুর মাংস
-
চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, ঝিনুক, ইত্যাদি
-
খেজুর
-
ব্রকলি
-
পালং শাক
-
বাঁধা কপি
-
মসুর, মুগ ডাল
-
বিন
-
বেইক করা আলু
-
টফু
ফোলেট (Folate) হচ্ছে এক ধরণের ভিটামিন বি যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে। তাই হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, যেমনঃ
-
গরুর মাংস
-
পালং শাক
-
চিনাবাদাম
-
আভোকাডো
-
ভাত
-
লেটুস
-
কিডনি বিন
আপনার শরীরে যদি অতি মাত্রায় হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, তাহলে আয়রনের সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। এ ব্যাপারে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন কারণ রক্তে আয়রনের পরিমাণ খুব বেশী বৃদ্ধি পেলে হিমোক্রোমাটোসিস (Hemochromatosis) হতে পারে। এর পরিণতিতে লিভার সিরোসিস হতে পারে।
শরীরের আয়রন শুষে নেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে সেসব খাবার খেতে হবে যা আপনার শরীরকে আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করবে। নিম্নোক্ত খাবারগুলো এ ব্যাপারে সাহায্য করবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ
-
কমলা, মাল্টা, লেবু, জাম্বুরা, ইত্যাদি
-
স্ট্রবেরি
-
সবুজ শাক
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারঃ
যেসব খাবার খাবেন না
খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট থেকে নেয়া ক্যালসিয়াম আপনার শরীরের আয়রন শুষে নেয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। তবে ক্যালসিয়াম নেয়া পুরোপুরি বন্ধ করবেন না কারণ এটা একটা প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট। মনে রাখতে হবে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেয়া বন্ধ রাখবেন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার ঠিক আগে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাবেন না। যেসব খাবারে ক্যালসিয়াম আছেঃ দুধ, পনির, দই, বীজ, ইত্যাদি।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তের নিম্ন মাত্রার হিমোগ্লোবিন শুধু ডায়েট এবং সাপ্লিমেন্টের সাহায্য সারানো যাবে না। যদি আপনার নিম্নোক্ত উপসর্গ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ
-
ফ্যাকাশে ত্বক ও মাড়ি
-
ক্লান্তি, দুর্বল মাংসপেশি
-
দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
-
সব সময় মাথা ব্যথা
-
কোন কারণ ছাড়াই ত্বকে দাগ পড়া
শেষ কথা
খাদ্য বা সাপ্লিমেন্টের সাহায্য রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করা যায়। তবে এ ব্যাপারে সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। হিমোগ্লোবিনের সমস্যা বেশী হলে আপনার আয়রন ট্র্যান্সফিউশন নিতে হতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে কয়েক সপ্তাহ থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক