মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৭:৫৭

বাংলাদেশী বংশদ্ভূত সারা জেন আহমেদের ২০২১ সালের ক্লাইমেট ব্রেকথ্রু অ্যাওয়ার্ড জয়

বাংলাদেশী বংশদ্ভূত সারা জেন আহমেদের ২০২১ সালের ক্লাইমেট ব্রেকথ্রু অ্যাওয়ার্ড জয়

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদন : পরিবেশ ও জলবায়ু ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখার জন্য ক্লাইমেট ব্রেকথ্রু অ্যাওয়ার্ড (Climate Breakthrough Award) পেয়েছেন বিশ্বের তিন জন নারী। এরা হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিস ফেয়ারচাইল্ড, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের সারা জেন আহমেদ এবং জার্মানির কাথেরিন গুতমান। প্রতি বছর জলবায়ু ও পরিবেশ ক্ষেত্রে পরিবর্তন সৃষ্টিকারী নতুন সাহসী ধারনা যা গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে— এর জন্য সংশ্লিষ্ট সেরা গবেষকদের এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ বছর পুরস্কারের আর্থিক মুল্য ৩ মিলিওন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

সারা জেন আহমেদ; এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের কৃষি ও গ্রাম উন্নয়নের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা বাংলাদেশী ড. মাহফুজ আহমেদ এবং ফিলিপিনো মাতা ভিভিয়ান আহমেদের কন্যা। সারা আহমেদ একজন বিখ্যাত অর্থ কৌশলবিদ। সারা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে স্থিতিস্থাপকতা ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে চান। সারাজেন ফিন্যান্সিয়াল ফিউচারস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি ভালনারাবেল ২০ গ্রুপ অফ ফাইনান্স মিনিস্টারস (ভি২০) গ্রুপের ৫৫টি দেশের অর্থমন্ত্রীদের জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ।

বাংলাদেশ সরকার প্রণীত ক্লাইমেট প্রস্পেরিটি প্ল্যান ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করার ক্ষেত্রে সারা জেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সম্প্রতি গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে তার এই পরিকল্পনাপত্রটি উপস্থাপিত হয়। বিশ্বের ৩৬টি ইতোমধ্যে নিজ নিজ দেশের জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সারা আহমেদ বলেছেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ, ৫০টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের জন্য জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা (Climate Prosperity Plan) তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা— যা কীনা ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা ও ২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের জিডিপি-এর প্রতিনিধিত্ব করে।

ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের সারা জেন আহমেদ ফিলিপাইনে তার নিজ দেশে নতুন কয়লা-চালিত বিদ্যুতের উপর সাম্প্রতিক সরকার-অনুমোদিত স্থগিতাদেশের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। তার যুগান্তকারী কৌশল হল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে আর্থিক এবং শক্তি পরিকল্পনায় বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক রূপান্তরকে অনুঘটক করা। তিনি নীতি ও আর্থিক ব্যবস্থার এই পরিকল্পনাপত্রটিকে জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বা সিপিপি বলেছেন। তিনি তার প্রস্তাবে— জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ উমুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা পরিকল্পনা সিপিপিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা, পরিকল্পনাগুলো কীভাবে অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করা হয় এবং কিভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যায় তা বিশ্লেষণ করেছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করা হচ্ছে। সরকার এটিকে জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে একীভূত করেছে।

করোনা বিধ্বস্থ প্রায় ২টি উত্তাল বছর শেষ হতে চলছে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অগ্রগতি খুবই ধীর গতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। সেখানে সব আক্ষেপ জানিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্তরা। কারণ এখন সময়ে দাবী কার্বণ নিঃসরণ থেকে পরিবেশ রক্ষা করা। বিশ্বায়নের যুগে প্রত্যেক মানুষকেই পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং পরিবেশ উন্নয়নের কাজে জোটবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সর্বশেষ জলবায়ু সম্মেলনেও এ ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়েছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক কারণগুলো চিরতরে বন্ধ করতে জোটবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। বিশেষ করে জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভর শক্তি উৎপাদন এবং খরচের যে সাংস্কৃতি তা পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে ৩ কার্বণ নির্গমণকে টার্গেট করতে হবে— যা অনেক দেশেই উপেক্ষা করা হয়।

উত্তরণ/আসো

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK