বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:০০

ডুবছে আশার সূর্য

ডুবছে আশার সূর্য

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : পূর্বের সূর্য যখন পশ্চিমে অস্তমিত হচ্ছিল তখন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা সোনালী আভায় সেজেছিল। গোধূলির এ অপার্থিব সৌন্দর্য্য যেকারো মনেই আনন্দ দেয়। কিন্তু সাগর পারের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাতে কোনো সৌন্দর্য্য তাদের দোলা দিচ্ছে না। উল্টো সাদা পোশাকে আরেকটি হার বাংলাদেশের জন্য উঁকি দিচ্ছে। নিজেদের আশার সূর্য ডুবিয়ে পাকিস্তানকে জয় উপহার দিচ্ছে স্বাগতিকরা। চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম দিনে পাকিস্তান ৯৩ রান করলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্ণ পয়েন্ট পাবে।

বাংলাদেশের দেয়া ২০২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তান বিনা উইকেটে তুলেছে ১০৯ রান। এর আগে প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৭ রানে। ব্যাটিংয়ে এ হতশ্রী পারফরম্যান্সে শেষ বাংলাদেশের আরেকটি টেস্ট ড্রয়ের সম্ভাবনা। জয়ের স্বপ্ন বা প্রত্যাশা করার আগে তো টেস্ট ড্রয়ের চিন্তা করতে হবে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত চক্রে বাংলাদেশ একটিমাত্র ম্যাচ ড্র করেছিল। বাকি সবকটিতেই হার। যে ম্যাচটি ড্র করেছিল সেটাতেও প্রকৃতির বাঁধা ছিল। টেস্ট ক্রিকেট ছন্দের খেলা, অধ্যবয়সের খেলা। ধৈর্য্য নিয়ে সাফল্য পেতে হয়। স্নায়ু  স্থির রেখে এগোতে হয়। অথচ বাংলাদেশ এ ফরম্যাটে এগোচ্ছে একেবারেই বিপরীতেভাবে। তাতে ধারাবাহিকভাবেই ব্যর্থ পুরো দল।

নতুন কিংবা পুরোনো যারাই দলে আসছে। ব্যর্থতার খোলস থেকে বের হতে পারছেন না কেউ। সাত সকালে দিনের প্রথম বলে মুশফিক হাসান আলীকে যেভাবে চার মেরেছেন তাতে মনে হচ্ছিল বড় কিছুই পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু এক বল পরই সব উল্টো। ডানহাতি পেসারের একটু ভেতরে ঢোকানো বলে কি বুঝে লিভ করতে গেলেন মুশফিক তা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। নিজের চতুর্থ বা পঞ্চম স্ট্যাম্প কোথায় আছে তা সম্পর্কে কোনো ধারণাই কি থাকবে না?

দিনের শুরুর ধাক্কা ভুলিয়ে দেন ইয়াসির ও লিটন। তাদের ৪৭ রানের জুটিতে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ কক্ষপথেই হাঁটছে। দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দারুণ সব শট ও দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি বাংলাদেশকে আবার লড়াইয়ে ফেরান। কিন্তু নিজেদের সেই ভুল টেকনিকেই আবার সব ওলট-পালট। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে শাহীন শাহ আফ্রিদির শর্ট বল আঘাত করে ইয়াসিরের হেলমেটে। ৩৬ রানে ব্যাটিং করতে থাকা ইয়াসির থেমে গেলেন সাত বল পরই। কনকাশন সাবের সুযোগ নিয়ে তাকে হাসপাতাল পাঠায় টিম ম্যানেজমেন্ট। ইয়াসিরের পরিবর্তে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ ছিল সোহান ও জয়ের। দল বেছে নেয় ৩ টেস্ট খেলা সোহানকে।

কিন্তু বিরতির পর আত্মহত্যাতেই শেষ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। স্পিনার সাজিদ খানের ঘূর্ণির বল লং অনের সীমানা পাড় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল সোজা যায় ফাহিম আশরাফের হাতে। তার আউটে মনোযোগ হারান লিটন। পরের ব্যাটসম্যানরাও তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করেন। সব মিলিয়ে ৪ রানে শেষ ৪ উইকেট। মাঝে মিরাজের ব্যাটও হাসেনি। ১১ রান করে ফেরেন সাজিদ খানের বলেই। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লিটনের ব্যাট থেকে এবার আসে ৫৯ রান। বাংলাদেশকে মাত্র ১৫৭ রানে অলআউট করে লক্ষ্য নাগালে রাখে পাকিস্তান।

এবার আরেক পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি পেলেন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসে হাসান আলীর শিকার ছিল ৫টি। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ তা বোঝা যাচ্ছিল। কারণ, পঞ্চম দিনের তিন সেশন রয়েছে তাদের। পাঁচ সেশনে ৯৩ রান তুলে জয় নিশ্চিত করা কঠিন কিছু নয়। দুই ওপেনার আবীদ আলী ও আব্দুল্লাহ শফিকের ব্যাটিং দেখে তাই মনে হল। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশ একবারও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। দুইটি রিভিউ নিয়েছিল। দুটোই বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়।

অতিথিদের দুই ব্যাটসম্যানই পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। আবীদ আলী ৫৬ ও অভিষিক্ত শফিক ৫৩ রানে ব্যাটিং করছেন। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যেমন অধারাবাহিক ছিল। বোলিংয়েও তাই। দুই পেসার ইবাদত ও রাহী ৭ ওভার হাত ঘুরিয়ে লাইন ও লেন্থ মিস করেছেন বারবার। তাইজুল একাই করেছেন ১৬ ওভার। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসেনি। বল ঘুরলেও পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছিল আরও উজ্জ্বল। সেই উজ্জ্বল আলোয় ডুবছে বাংলাদেশের আশার সূর্য।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK