উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নতুন আরও ১০ আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফজলে এলাহী খান এ আদেশ দেন। এ নিয়ে ৬০ আসামিকে রিমান্ডে পেল পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে পীরগঞ্জ আমলি আদালতের সাধারণ নিবন্ধক শহীদুর রহমান বলেন, নতুন করে ১০ আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে দুই দফায় ৫০ আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের মামলায় নতুন ১০ আসামির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে, সে কারণে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র জানান, রিমান্ড পাওয়া ১০ জনের মধ্যে হামলার ঘটনার সময়ে পেট্রোল নিয়ে মোটরসাইকেলে করে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩) ও ওমর ফারুক ওরফে টনেট (২৪) নামে দুজন আসামি রয়েছে। গত রবিবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে ওই দুজনকে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ দুজন জামায়াত-শিবিরের কর্মী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
ওসি জানান, বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা তিনটি মামলা এবং হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। সবশেষ গত মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাতে নজরুল ইসলাম নামে একজনকে পীরগঞ্জের চতরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেফতার ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। গ্রেফতারদের মধ্যে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া ও সহিংসতার ঘটনা উসকে দেয়ার অন্যতম হোতা পরিতোষ সরকার, উজ্জ্বল হোসেন, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মন্ডল ও মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলাম সহ অনেকই রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সাত আসামি হামলার ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ অক্টোবর রোববার রাতে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে উগ্রবাদীরা। এ ঘটনায় গ্রামটির ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া চার মামলায় ৭০ জন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে প্রথম দফায় ৩৭ এবং দ্বিতীয় দফায় আরও ১৩ জন আসামির তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
উত্তরণবার্তা/এআর