উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় চাঁদাবাজি করতো একটি চক্র। বেশিরভাগ সময় ব্যবসায়ী ও নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের টার্গেট করে তারা চাঁদাবাজি করছিল। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না পেলে ভুক্তভোগীদের দেয়া হতো হুমকি। পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করতো বলে জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। ২৪ অক্টোবর রবিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে জানায়, তারা মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য, যার সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা সবাই এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে এবং এই সূত্রে পরস্পরের পরিচিত। এই চক্রটি ঢাকার মোহাম্মদপুর, বসিলা, শ্যামলী এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে বিগত কয়েক বছর যাবৎ এলাকার ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের কাছে চাঁদাবাজি করে আসছে। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। তারপরেও কেউ চাঁদা দিতে অসম্মত হলে তারা ভুক্তভোগীদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলা ও ডাকাতি করে থাকে। গ্রেফতারকৃতদের নামে একাধিক চুরি, ডাকাতি এবং চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এছাড়াও তারা এলাকায় মাদক ও চোরাই অটোরিকশার ব্যাবসা, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বেশ কয়েক মাস যাবৎ একজন পলাতক তথাকথিত সন্ত্রাসীর নামে ইডেন অটোস নামক প্রতিষ্ঠানটিতে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দেওয়ায় বিভিন্ন রকম হুমকি দেয়। এই চক্রের সদস্যরা হুমকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। গত (১১ অক্টোবর) তারা ঢাকা উদ্যান এলাকায় গ্রেফতারকৃত জসিমের আবাসস্থলে জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল এবং রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটো শো-রুম ডাকাতি করার বিস্তারিত পরিকল্পনা করে।
গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরপুরের শ্যামলীবাগ এলাকায় অবস্থিত উত্তরা মটরস এর ডিলার “ইডেন আটো’স” নামক শোরুমে একটি ডাকাত দল ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীব এবং মোটর টেকনিশিয়ান নুরনবী হাসানকে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় ডাকাত দলের কিছু সদস্য শো-রুমের দোতলায় উঠে গ্লাস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ক্যাশ ড্রয়ার ইত্যাদি ভাঙচুর করে এবং ক্যাশ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ডেস্কটপ মনিটর নিয়ে ডাকাতি করে। ওই ঘটনায় শো-রুমের মালিক পক্ষ থেকে কেএম আবদুল খালেক, শেরেবাংলা নগর থানায় ঘটনার পরদিন একটি মামলা দায়ের করেন।
ডাকাতির ঘটনাটি ঢাকার অন্যতম প্রধান সড়ক ও জনবহুল এলাকায় সংগঠিত হওয়ায় স্থানীয় জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতির/ত্রাসের সঞ্চার করে এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রাতে র্যাব সদর দফতর গোয়ন্দা শাখা ও র্যাব-২ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এবং ধামরাই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মূলহোতা মো. জহিরুল ইসলাম উরুফে জহির (৩৩), সহযোগী মো. জসিম উদ্দিন (৩৪), মো. জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), মো. খায়রুল ভূঁইয়া (২০), মো. রাকিব হাসান (২০), এবং মো. নয়ন (২৮), গ্রেফতারকৃত কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরি এবং ছিনতাই চাঁদাবাজি, জমি দখলের মামলা রয়েছে।
উত্তরণবার্তা/এআর