মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:৫৯

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ‘অন্যায্য দাবি’ অগ্রাহ্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধু

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ‘অন্যায্য দাবি’ অগ্রাহ্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধু

উত্তরণ বার্তা ডেস্ক : স্বাধীনতার পর ত্রাণ ও ঋণ সহায়তা নিয়ে আসা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ইউএসএইডের বিভিন্ন ‘অন্যায় অন্যায্য’ দাবি দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রাহ্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ভঙ্গুর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজেও হাত দিতে হয়েছিল। শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটি আয়োজিত ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক ওয়েবিনারের বক্তারা এসব কথা বলেন। গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার গবেষক রওনক জাহান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান এবং তরুণ লেখক ও গবেষক হাসান মোরশেদ অংশ নেন ওয়েবিনারের এই পর্ব সঞ্চালনা করেন দলটির অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান।
 
মসিউর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পরপরই এবং বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার আগেই ভারত সরকার সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লিয়াজোঁ অফিসার্স (সিএএলও) নামে আমাদের প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য কিছু সরকারি কর্মকর্তা দিয়েছিল। ইন্ডিয়ান প্ল্যানিং কমিশনের মেম্বার সুখময় চক্রবর্তী বিষয়টি সমন্বয় করতেন। তারা যখন দেখলেন নতুন দেশের পক্ষে কাজ করার মতো প্রশাসনে পর্যাপ্ত লোকবল রয়েছে তখন এখান থেকে তাদের উঠিয়ে নেয়া হল।
 
এছাড়া এখানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছুদিন পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর কিছু অংশ ছিল। বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রত্যয় বা সাহসের বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করে সেনাবাহিনীকে ফিরে যেতে বাধ্য করেন। স্বাধীনতার পর ত্রাণ ও ঋণ সহায়তা নিয়ে আসা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ইউএসএইডের বিভিন্ন ‘অন্যায় অন্যায্য’ দাবি এবং চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে বঙ্গবন্ধু তা দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রাহ্য করেছেন বলে জানান মসিউর রহমান।
 
তিনি বলেন, রিলিফ ব্যবস্থাপনা ছিল একটা জটিল কাজ। বঙ্গবন্ধুকে এই কাজ দিয়েই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাজে হাত দিতে হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক থেকে পাকিস্তানের নেয়া ঋণদায় অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার আবেদনে লাখ লাখ বাঙালি প্রাণ দিয়েছে। এখন আবার যদি আবেদন করি তারা না খেয়ে থাকবে। তবুও তোমাদের অন্যায় আবদার মেনে নেয়া হবে না।
 
পরে বিশ্বব্যাংকের কিছু ন্যায়সঙ্গত ঋণদায়ের প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু মেনে নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। ভূমি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীন ও রাশিয়ার অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু সমবায় ও কো-অপারেটিভ পদ্ধতি চালু করেন বলে জানান তৎকালীন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ঋণ ও অর্থ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে ডিভ্যালুয়েশনের প্রস্তাব দেয় আইএমএফ। বঙ্গবন্ধু তখন বাধ্য হয়ে ওই প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। তবে তিনি নিজের তীক্ষè বুদ্ধি দিয়ে সেখানে একটি শর্ত জুড়ে দেন।
 
তাহল যখন নতুন ফসল বাজারে আসে তখনই ডিভ্যালুয়েশন বাস্তবায়ন করতে হবে, এর আগে নয়। তার আশা ছিল, তখন পণ্যের দাম নিুমুখী থাকে। ফলে বাজারে এর প্রভাব তুলনামূলক কম পড়বে। রওনক জাহান বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ভঙ্গুর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজেও হাত দিতে হয়েছিল। স্বাধীনতার আগে বড় বড় শিল্প-কারখানা সব ছিল পাকিস্তানিদের দখলে।
 
তখন ফরেন রিজার্ভ বলতে কিছুই ছিল না। প্রশাসনে যেসব লোকজন ছিল তারা বয়সে তরুণ ছিল। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশই প্রথম একটা স্বাধীন দেশ যে পোস্ট কলোনিয়াল স্টেট সিস্টেমকে ভেঙে নতুন দেশ হয়েছে। সেই সময় এটা ছিল একটা ইউনিক ব্যাপার। এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বিভিন্ন রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার পর স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের বিষয়টি হয়তো স্বাভাবিক ঘটনা হয়েছে।
 
তখন শুধু পশ্চিমা বিশ্ব নয়, তৃতীয় বিশ্বের দেশ, ইসলামী দেশগুলোও আমাদের পক্ষে ছিল না। কারণ তারা ভেবেছিল এতে করে নিজেদের দেশেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। হাসান মোরশেদ বলেন, অনেকটা শূন্য হাতেই যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজে হাত দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ত্রাণ ও পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দিয়েই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা শুরু করিয়েছিলেন। কারণ যুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত হওয়ার আগেও বাংলাদেশে বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যার কারণে ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে কৃষি অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তখন অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ আসত কৃষি থেকে।
 
তিনি আরও বলেন, ’৭২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়টা ছিল পুনর্বাসনের সময়। ভারত থেকে ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য তখন ৪৩ লাখ বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়েছিল। এছাড়া তাদের খাদ্য সরবরাহ করতে হয়েছিল। তখন তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মীদের কাজে লাগিয়ে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছিল। সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, স্বাধীনতার পরপর আমাদের তিন হাজার মণ গম, দুই হাজার মণ বোরো ধান বীজ প্রয়োজন ছিল।
 
ত্রিশ হাজার টন সার দরকার ছিল, ১৫ লাখ টন আলু বীজ দরকার ছিল বলে তখন বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু সরকার কী একটা চাপ মাথায় নিয়ে সরকার গঠন করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় নিয়েই প্রথম বছর অতিক্রম করতে হয়েছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১২ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে নানামুখী পরিকল্পনার পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যার সুফল এখনও পাচ্ছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে দলের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
 
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK