শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ১৬:৫২

শেখ হাসিনা: সময়ের সাহসী নেতা

শেখ হাসিনা: সময়ের সাহসী নেতা

মোহাম্মদ হানিফ হোসেন
 
 
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের আজকের এইদিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় সন্তান। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনকারী শেখ হাসিনা তৎকালীন ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আজ সময়ের সাহসী নেতা।
 
২৩ বছর পাকিস্তানের জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে, বার বার মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে অধিকারবঞ্চিত বাঙালীর স্বাধীনতা এনেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারাবিশ্বে তাঁর পরিচিতি ছিল শোষিত মানুষের  নেতা। তাঁর কন্যা এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। মানবিক মনোভাবের কারণে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে বহুল আলোচিত নাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন স্বাধীনতা দিয়েছেন আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দিয়েছেন জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। দেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন। বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়েই মূলত বাংলাদেশকে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭৫-এর মর্মন্তুদ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল বাংলাদেশ। তখন দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। তখন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামরিক শাসকের দুঃশাসনে নিপতিত। স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮১ সালের সম্মেলনে সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে যাবে। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর জীবনপণ চেষ্টায় সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর দলের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়। দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের রক্তে ভেজা সংগ্রামী পতাকার। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে জাতীয় ও দলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
 
নানা প্রতিক‚লতার মধ্যে দেশের মানুষ  ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেন এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ওই সময় উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তিনি চুক্তি করেন। ১৯৮১ সালের পর থেকে দীর্ঘ চার দশক ধরে দেশের রাজনীতির অগ্রভাগে থেকে নিরলস নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এই সময়ে ঘাতকদের উত্তরসূরিরা বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল পরিকল্পিত; বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সেই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিস্তার ঘটানো। এর আগেও এই চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সা¤প্রদায়িকতার আঁতুড়ঘর বানাতে চেয়েছিল। পরবর্তীকালে ঘাতকদের আনুক‚ল্যে যারাই ক্ষমতাসীন হয়েছে, তারাই বাংলাদেশকে সা¤প্রদায়িক ও জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তার ঘটিয়েছে। 
 
দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দরিদ্রতাসহ নানাবিধ কারণে দেশ যখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছিল, এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হন। অপশাসন রোধ ও মানুষে জীবনমানের উন্নতি ঘটানো জরুরি হয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অনেক দায়িত্ব অর্পিত হয়। তিনি সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
 
গত সাড়ে ১২ বছরে রাষ্ট্রনায়কোচিত অসংখ্য কাজের সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। সংগ্রাম আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। যার উদাহরণ হতে পারে স্বপ্নসফল পদ্মাসেতু। জাতির পিতার খুনিদের আইনের আওতায় এনে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া। দেশি-বিদেশী প্রবল ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধি অপরাধের বিচারকার্য সম্পন্ন করা। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের ৫০ দিনে মধ্যে ঘটে যাওয়া বিডিআর বিদ্রোহের ঘোর অমানিশার কবল থেকে দেশকে রক্ষা করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। দীর্ঘ আটষট্টি বৎসরের পুরোনো ক্ষত ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনাটুকু আদায়সহ নানা ক্ষেত্রে। শুধু উন্নয়ন অগ্রগতি নয়, সাধারণ জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন, সামাজিক বেস্টনীর মাধ্যমে বিশেষ করে বয়স্কভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, করোনাকালীন প্রণোদনা, অসহায় মানুষকে গৃহহীনদের আশ্রায়ন প্রকল্পসহ জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের কল্যাণে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । 
 
এই তো কিছু কাল আগে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে করতে হয় তা বাংলাদেশ থেকে শিখতে পারো। বাংলাদেশ কীভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছে তা-ও এখন অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে শিখতে চায়।’ বিশ্বব্যাংক প্রধানের এমন প্রশংসনীয় বক্তব্য শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে গর্বিত বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আমরা মনে করি, এটাই বঙ্গবন্ধু কন্যার দীঘ রাজনীতির সুফল, জনগণের ভালোবাসার প্রতিফলন। এই বর্ণনার মানে হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশ। 
 
স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদসহ অনেক সূচকে এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদন বলা হয়েছিল, মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে এখন ১৩৬তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান আরো পেছনে ১৫০তম। লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। এমন খবর এসেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সব শেষ প্রতিবেদনে। দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১০০তম। ভারতের অবস্থান ১০৮তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান সবার নিচে। এছাড়া নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৯’ বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার ভ‚য়সী প্রশংসা করে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে করেছেন বিশ্বের পরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য।
 
জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার জীবননাশের জন্য কমপক্ষে ২১ বার হামলা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। সে সময় তাঁকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। ছয় বছর প্রবাসে থাকার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৬৪টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে তার নেতৃত্বাধীন জোট। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেন তিনি। 
 
জাতির পিতার পথ ধরে জাতিসংঘে প্রতিবার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদান বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। যারা একদিন বলতো বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, আজ তারাই বলে, ‘বিস্ময়কর উত্থান বাংলাদেশের’।  জাতির পিতা দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। এর একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা ও সাহসের সঙ্গে সম্পন্ন করে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। 
 
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি পালন করবে তার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাংলার মানুষের নিবেদিতপ্রাণ প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে তার সুস্থ ও দীর্ঘজীবন প্রার্থনা করি। 
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK