শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৪:৫৪

সহায়তা দিলেও তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না কেউ

সহায়তা দিলেও তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না কেউ

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : আফগানিস্তানে তালেবানে সরকার গঠনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। চীন ও পাকিস্তান অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু স্বীকৃতির জন্য উন্মুখ থাকা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না কেউ। সবাই তালেবানের ভবিষ্যত কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ আবদুল ঘানি বারাদার এক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। তবে তালেবান তার মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কাবুলের পর কান্দাহারেও তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। নারীরা বিক্ষোভ করেছে তাদের পোশাক নিয়ে। এদিকে আফগান শরণার্থীদের সহায়তা করতে তহবিল সংগ্রহের এক প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা, বুশ ও ক্লিনটন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের
 
চেষ্টা সত্ত্বেও তালেবানের স্বীকৃতি মিলছে না :আফগানিস্তানে তালেবানের সরকার গঠনের পাঁচ দিনের মাথায় গত রবিবার কাবুল সফরে যান কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি এবং তিনি আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ হাসান আখুন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু দোহায় ফিরে সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তালেবানের সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এখনও আসেনি।
 
সতর্ক অবস্থানে পাকিস্তান : ১৯৯৬ সালে তালেবান কাবুল দখলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ওই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। আবার পাকিস্তানই তালেবানের জন্য সৌদি আরব এবং ইউএই’র স্বীকৃতি আদায় করেছিল। কিন্তু এবার তালেবানের কাবুল দখলের এক মাস পরও স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে ইসলামাবাদ এখনও চুপ। ইসলামাবাদে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি রিজভী বলছেন, পাকিস্তান তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। তারা এবার একা কিছু করতে চায় না। অন্য আরও দশ-পাঁচ জনের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। প্রতিবেশি অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার এগুতে চাইছে পাকিস্তান। আফগান এবং তালেবানের প্রশ্নে কমপক্ষে আঞ্চলিক একটি ঐক্য চাইছে পাকিস্তান।
 
সম্ভবত সে কারণেই পাকিস্তানের উদ্যোগে গত বুধবার চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। দু’দিন পর শনিবার আবারও পাকিস্তানের উদ্যোগেই এসব দেশের গোয়েন্দা প্রধানরা বৈঠক করেন। আমেরিকার সঙ্গেও গোপনে পাকিস্তান কথা বলছে। গত বুধবারই সিআইএ’র প্রধান উইলিয়াম বার্নস ইসলামাবাদে গিয়ে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার রশীদ বাজওয়া এবং আইএসআই প্রধান লে. জেনারেল ফায়েজ হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিলেও পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সাহায্য দিয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে আটক রাখা আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান।
 
তালেবান সরকার গঠনের পর অভিনন্দন জানিয়েছে চীন। গত সপ্তাহে চীন আফগানিস্তানের জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলারের জরুরি খাদ্য এবং ওষুধ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আফগানিস্তানে বিনিয়োগ নিয়ে দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত সপ্তাহে চীনাদের কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ তাই বলছেন যে তালেবান সরকারের প্রতি পাকিস্তান, চীন বা কাতারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অনেকটাই এখন অপ্রাসঙ্গিক, কারণ সম্পর্ক শুরু হয়ে গেছে।
 
বৈধতা এবং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য তালেবান উন্মুখ হয়ে পড়েছে। তারা মনে করছে, সরকার পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেশের, বিশেষ করে প্রতিবেশি কিছু দেশের স্বীকৃতি জরুরি। গত রবিবার টেলিফোনে তালেবানের সিনিয়র মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের সঙ্গে এমন কথা বলেছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়েদ নিজামী। তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্তাকি দু’দিন আগে আফগান কূটনীতিকদের বিদেশি মিশনগুলোতে কাজে যোগ দিতে বলেছেন। কিন্তু আফগান দূতাবাসগুলো এখন কার্যত অচল। এমনকি লন্ডন এবং ওয়াশিংটনেও আফগান দূতাবাসে কোনও কূটনৈতিক তত্পরতা নেই। বলতে গেলে বন্ধ। ইসলামাবাদে দূতাবাস সচল। আবার তাজিকিস্তান এবং ইতালিতে আফগান রাষ্ট্রদূতরা তাদের ইচ্ছামত তালেবান বিরোধীদের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। নিজামী আরও বলেন, মানবিক সাহায্যের আশ্বাস থাকলেও কাবুলের সরকারের হাতে নগদ টাকা নেই। বিদেশের সঙ্গে ব্যাংকিং কাজ করছে না। অনেক সরকারি কর্মচারী কাজে ফিরলেও বেতন পাচ্ছেন না। কবে পাবেন তা নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা রয়েছে।
 
জাতিসংঘ তহবিল সংগ্রহ করছে। তবে এর সঙ্গে সংস্থাটি তালেবানকে মানবাধিকার, নারী অধিকার শর্ত জুড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। বিভিন্ন আফগান জাতিগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু এবং ভিন্নমতের লোকজনকে তালেবান তাদের সরকারে শেষ পর্যন্ত কতটা জায়গা দেবে তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তাদের শিক্ষানীতিতে নারীদের শিক্ষার অধিকার মেনে নিয়েছে তালেবান, যদিও নির্দেশ দিয়েছে যে নারী-পুরুষ একসঙ্গে ক্লাশে বসা চলবে না। তবে বৈধতা এবং স্বীকৃতি পেতে তালেবানের আসল পরীক্ষা হবে সন্ত্রাস নিয়ে তাদের অবস্থানের ওপর। কারণ শুধু আমেরিকা নয়, এই ইস্যুতে চীন, রাশিয়া এমনকি পাকিস্তানও কমবেশি উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান চায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি যা পাকিস্তান তালেবান নামে পরিচিত) নেতাদের ধরে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। চীন চায় শিনজিয়াংয়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইটিআইএমকে আফগানিস্তান থেকে হটাতে হবে।
 
অন্যদিকে আরেক প্রতিবেশি ইরান চায় আইএস এবং আল-কায়েদা যেন আফগানিস্তানে না থাকে। আর রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর চাওয়া হলো, আইএসকে (ইসলামিক স্টেট-খোরাসান) যেন কোনওভাবেই আফগানিস্তানে প্রশ্রয় না পায়। সুতরাং এক মাস আগে কাবুল দখল তালেবানের জন্য যত সহজ ছিল, বৈধতা অর্জন ও দেশ শাসন করা হবে ততটাই জটিল এবং কঠিন। এদিকে আফগান শরণার্থীদের সহায়তা দিতে এক প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও তার স্ত্রী লরা বুশ, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী মিশেল ওবামা।
 
তালেবানের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও তাদের নতুন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ বারাদারের প্রতিদ্বন্দ্বিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীটি। তালেবান মুখপাত্র সুলাইল শাহীন জানিয়েছেন, আবদুল ঘানি বারাদার একটি ভয়েস ম্যাসেজে এক সংঘর্ষে তার নিহত বা আহত হওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি মিথ্যা এবং পুরোপুরি ভিত্তিহীন। অন্যদিকে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারের একটি আবাসিক সেনা কলোনি থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের চলে যেতে বলার পর কয়েক হাজার লোক তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা।
উত্তরণবার্তা/এআর
 
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK