শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ১১:৪৬

একসঙ্গে শিশু পরিবারের চার কন্যার বিয়ে

একসঙ্গে শিশু পরিবারের চার কন্যার বিয়ে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : বিয়ে, বিদায়, জীবনের নতুন মোড়, যদিও এ স্বপ্নের উঠোনে রঙিন আঁকিবুকির ক্যানভাস একটি দুটি নয় বরং চারটি জীবনের। আর পরিবারের সদস্য!! তাও হাজার ছুঁই ছুঁই। বিয়ের আয়োজন ঘিরে তাই কমতি নেই ব্যস্ততার। কেউ অতিথি আপ্যায়ন করছেন, কেউ ব্যস্ত কনেকে নিয়ে। যদিও তাদের সবার মাঝের সম্পর্কটা আত্মার। শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সরকারি শিশু পরিবারের চার কন্যা। শৈশব কৈশরের প্রিয় আঙিনা ছেড়ে নতুন জীবনের শুরু চার কনের। প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে আগের দিন ছিলে হলুদ সন্ধ্যা। যেখানে পাত্রীদের ঘিরে ছিলে নানা আয়োজন। শিশু পরিবারের নতুন পুরনো মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে আয়োজনকে রাঙিয়ে তুলেছিলেন শিক্ষকরা।

স্বজনহারা চার কনেই বেড়ে উঠেছেন সরকারি শিশু পরিবারে। লেখাপড়া শিখেছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নানা বিষয়ে। কনে আন্নি, আয়েশা, সুমা আর আখিমনির একজন সরকারি চাকরিজীবী, দুজন প্রকৌশলী হওয়ার অপেক্ষায়, আরেকজন আবার প্রহর গুনছেন নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার। পরিচয় জানা নেই, তাই বিয়েতে একজন কনের কাবিননামায় বাবা-মায়ের নামের স্থানে লেখা হয়েছে আদম ও হাওয়া। এতে একটুও মন ভারি নয় তার। বরং বিয়ের পর শিশু পরিবার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলতেই ওর চোখ ভিজে যায়। স্মৃতিচারণজুড়ে প্রিয় শিক্ষক আর অন্য স্বজনহারা বোনেরা। এরাই তো তাদের পিতা-মাতা, স্বজন আর প্রিয়জন। তাই বিয়ের বর্ণিল আয়োজনে কনেদের মনে বিষাদের সুর।

চোখে-মুখে খুশির আনন্দ পাত্রপক্ষের। স্বজনহারা কনেদের নতুন পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার তর সইছে না। বিয়ের মঞ্চে একে একে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় নব বর আর বধূকে। পাত্রদের প্রতিশ্রুতি, শুধু নিজেকে নয় বরং স্ত্রীদের নিয়েই এগিয়ে যাবেন তারা। প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষার জন্য করতে চান সর্বোচ্চ চেষ্টা। বলেছেন, তাদের স্ত্রীরা চাইলে বেছে নিতে পারেন পছন্দের পেশা। জমকালো আয়োজনের বিয়েতে কমতি ছিলে না এতেটুকুও। কন্যাদের জন্য উপহারের ডালি সাজিয়েছেন, সরকারসহ অনেকেই। আনন্দে সামিল প্রমিক্সকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৌসুমী ইসলাম সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রিয়জনহারা শিশুদের কল্যাণে এগিয়ে আসার।  

সরকারি শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রথম পারিবারিক, সামাজিক  ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। সে অনুয়াযী এ চার কনে প্রতিষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা অর্জন করেছেন। তাদের সম্মতিতেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লক্ষ্য অর্জন আর সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিতে মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার। বলেছেন, এ চার কনের মতো প্রতিটি নারীকেই এগিয়ে যেতে হবে।

আর জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার স্বজনহারা শিশুদের কল্যাণে কাজ করছে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। এতেদিন সরকারের তত্ত্বাবধানেই বেড়ে উঠেছেন এ চার কনে। আগামীতেও যেকোনো সহযোগিতায় পাশে আছেন তারা। একই সঙ্গে চার কন্যার বিদায়ে এখন বিষাদের সুর সরকারি শিশু পরিবারে। যদিও প্রার্থনাজুড়ে আছে কেবলই তাদের স্বর্ণালি আগামির প্রত্যাশা।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK