মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৯:৫৭
ব্রেকিং নিউজ

লালবাগে যুদ্ধাপরাধীর কবরে এখনো ‘শহীদ’ লেখা?

লালবাগে যুদ্ধাপরাধীর কবরে এখনো ‘শহীদ’ লেখা?

মোহাম্মদ হানিফ হোসেন

 
দেশের কওমি বিদ্যাপীঠের সুনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান জামেয়া কোরানীয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসা। ১৯৭১ সালে এই বিদ্যাপীঠটি স্বাধীনতা বিরোধীদের আস্তানা হিসেবে সুপরিচিত ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা কাফের ও হিন্দুদের ধন সম্পদ ও নারীরা গণিমতের মাল ফতোয়া প্রদান করতো। মৌলবাদী ফতোয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মারামারি, খুনোখুনি, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ধর্ষিতও হয়েছে বহু নারী। আক্রান্ত হয়েছে বহু পরিবার। পাকিস্তানের দোসর রাজাকার শিরোমণি মোস্তফা আল মাদানীকে ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট তার দেশ বিরোধী কৃতকর্মের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা মুন্সিগঞ্জের এক মাহফিলে গুলি করে হত্যা করে। তার লাশ পাকিস্তানি আর্মি পাহারায় ঢাকায় এনে লালবাগ কেল্লার ভেতরের মাঠে জানাজা শেষে মাদ্রাসার ও লালবাগ শাহী মসজিদের ভেতরের কবরস্থানে দাফন করা হয়। জনশ্রুতি আছে, দাফনের পরও দীর্ঘদিন পাক আর্মি কবরটি পাহারায় রাখে। তখন রাজাকারদের ভয় ছিল মুক্তিযোদ্ধারা লাশটি যদি তুলে নিয়ে যায়। তাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পাক আর্মিদের সহায়তা নেন। 
 
 
 
 
কিন্তু দু:খ হয়, দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ ৫০ বছর চলে গিয়েছে। এই বৃহত্তর লালবাগ থেকে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনেক বড় বড় নেতার জন্ম হয়েছে। তারা এই মাদ্রাসায় ও মসজিদে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের বহু নেতা, এমপি, এমনকি মন্ত্রীরাও বিভিন্ন সময় এখানে জুম্মায় নামাজ আদায় করে থাকেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তো প্রত্যেক জুম্মায় নামাজ আদায় এবং বয়ান শুনেন। অনেকে কবরও জিয়ারত করেন। কিন্তু এই যুদ্ধাপরাধী রাজাকার শিরোমণি মোস্তফা আল মাদানীর কবর এখানে কেন এই প্রশ্নটি কেউ করেন না! আরো আশ্চর্যের বিষয় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তার কবরের ফলকে ‘শহীদ’ শব্দটি লেখা রয়েছে। এতে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মনে করতে পারেন উনি হয়তো মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনী ও এদেশে তাদের দোসর রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সে পাকবাহিনীর সহায়ক, যুদ্ধাপরাধী। 
 
 
 
একটি স্বাধীনদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকারের কবরে নামের আগে শহীদ লেখা! আর তার রক্ষণাবেক্ষণ করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ মাদ্রাসা কমিটি! দেশচেতনা বিরোধী কর্মকান্ড করেও যে শহীদ হওয়া যায় এখানে থেকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মনে গুরুত্বপূর্ণভাবে তা দাগ কাটতে পারে। এতে করে তারা দেশপ্রেমের চাইতে দেশবিরোধী প্রেমে মগ্নচৈতন্য হতে পারে। এই কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুখ্যাত য্দ্ধুাপরাধী থেকে দেশবিরোধী রাজাকার শিরোমণি মোস্তফা আল মাদানীর কবরে ‘শহীদ’ লেখা ফলকটি অপসারণ করে এই রাজাকারের কবরটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদের বাহিরে স্থানান্তর করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্যোগী হওয়া উচিত অনুরোধ করছি।
 
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK