শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ০৩:৫১
ব্রেকিং নিউজ

রিজভী সমাচার...

রিজভী সমাচার...

মোহাম্মদ হানিফ হোসেন
 
দেশে করোনার টিকা আসার পর থেকে নানা নেতিবাচক কথাবার্তা বলে আসছিলেন বিএনপি নেতারা। টিকার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন দলটির কোনো কোনো নেতা। আবার কেউ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগে টিকা নেয়ার বিষয়ে উপহাস করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বাঁচলে বা মরলেও টিকা শরীরে প্রবেশ করাবেন না বলে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলালেন।
 
ভ্যাকসিন নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও। গত ২৬ জুলাই সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে গিয়ে তিনি টিকা নেন। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের বরাত দিয়ে পত্রিকায় এই তথ্যটি প্রকাশ পেয়েছে। গত মার্চে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা নেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন রিজভী। তখন তিনি বলেছিলেন, ন্যায়সঙ্গতভাবে আমি টিকার বিরোধিতা করেছি, বাঁচি আর মরি ওই টিকা আমার শরীরে প্রবেশ করতে দেব না। ১৬ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন বিএনপির এই নেতা। ১৭ মার্চ তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ দুই মাস হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাসায় ফেরেন। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকরা বলেছেন তার ভেকসিন নেয়া জরুরি। শেষ পর্যন্ত ২৬ জুলাই ‘সিদ্ধান্ত’ কার্যত প্রত্যাহার করলেন!
 
ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতার আরও কয়েকটি ‘বচন’ এখানে তুলে ধরছি-
 
১‌. ‘বিএনপিকে ভ্যাকসিন দিয়ে মারতে চায় সরকার। তাদের উদ্দেশ্য হলো, বিএনপিকে নিধন করা। খুন, গুম দিয়ে বিএনপিকে নিধন করার চেষ্টা করেছিল, এখন ভ্যাকসিনের নিরাপত্তার জন্য বিএনপিকে আগে দিয়ে নিধন করার চেষ্টা করছে। এ সরকার মানুষের মরা-বাঁচা নিয়েও তিরস্কার শুরু করেছে।
 
২. ‘আমি যতটুকু জানি, অন্য দু-একটি দেশে যেখানে ভারত টিকা দিয়েছে, সেখানে কিন্তু টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। নতজানু সরকার থাকলে, আত্মসমর্পণকারী সরকার থাকলে তারা এগুলোর কিছুই পরোয়া করে না। তারা জনগণের সঙ্গে প্রহসন করছে।’
 
৩. ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। কীভাবে নিয়েছেন, সেটা কিন্তু তিনি জানাননি। গতকাল, গত, পরশু দিনও ওই যে গাজীপুরের মন্ত্রী আছেন না আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী), তার ওখানে সিরিঞ্জ দেখানো হয়েছে; কিন্তু তা পুশ করার কোনো ছবি নেই। কারণ, ভেকসিন নিয়ে ওরা নিজেরাও ভীত-সন্ত্রস্ত। ওরা নিজেরাও জানে এই টিকা ‘দুই নম্বর’। এই টিকার কার্যকারিতা নেই।’
 
৪. ‘দেখি এই টিকায় বাংলাদেশে কত লোক মারা যায়, তার পর আমরা আমাদেরটা দেব।’
 
৫. ‘গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ার করেও ওদের (ক্ষমতাসীন দল) মনের স্বাদ মিটছে না। এখন ভেজাল ভ্যাকসিন দিয়ে দেখবে বিএনপি মরে না বাঁচে।’
 
৬. ‘সরকার আরেকটা জালিয়াতির সার্টিফিকেট চালু করেছে। যারা ভ্যাকসিন নেবে তাদের একটি সম্মতিপত্র বা অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। তার নাম, তার বাবার নাম, মায়ের নাম, আইডি নম্বর- এটা দিয়ে দিতে হবে যে, মানে হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে পরে কিছু হলে সরকার দায়ী না।’
 
৭. ‘ভ্যাকসিনে মানুষ বাঁচবে কী বাঁচবে না, তা নিশ্চিত নয়।’
 
৮. ‘মহামারিকেও মুনাফা অর্জনের উপলক্ষ বানিয়েছে সরকার’। 
 
শুধু তাই নয়, গত ৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রাখেন, কেন আগে সাধারণ মানুষকে বাদ দিয়ে ভিভিআইপিদেরকে দেয়া হবে?
 
রুহুল কবির রিজভীর এসব ‘বচন’ সেসময় ভেকসিন নিয়ে সাধারণ জনমনে ভীতি ও অনীহা প্রকাশ পেয়েছিল। একথা সত্য যে, কেউ কেউ রাজনীতির ‘জোকার’ বলেন রিজভী সাহেবকে। এর কারণও রয়েছে। সাম্প্রতিককালে তার মতো এতো সুনিপুণভাবে মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার অপচেষ্টা কেউ করেছে বলে আমার জানা নেই। অবলীলায় এবং নিঃসকোচে তিনি এসব মিথ্যা আউরিয়ে যান। 
এক সময় নতুন এই মহামারি নিয়ে সারাবিশ্বই বিপর্যস্ত ছিল। কোথাও কিছু বুঝে ওঠা যাচ্ছিল না, কোনো উপকরণ পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপরও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এসব মোকাবিলা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে এবং সাফল্যের পথে এগিয়েছে। শুরুতে শতভাগ ব্যবস্থাপনা না থাকলেও দ্রুতই বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। যার প্রশংসাও মিলছে বিশ্বের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। 
 
জানুয়ারি মাসে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন আমদানি করা হচ্ছে এমন খবর শোনার পর থেকেই বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল বিরোধিতার নামে অভিযোগ শুরু করে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারবে না, দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারবে না- এমন অভিযোগও তারা করে। নানাভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। অবশেষে করোনা ভ্যাকসিনকে রাজনৈতিক ইস্যু করতে চেয়েও বিফল হয়েছে বিএনপি। তাদের এ নেতিবাচক রাজনীতিকে ভালভাবে গ্রহণ করেনি দেশের মানুষ। এদিকে ভ্যাকসিনের চরম বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরসহ বহু নেতা-কর্মী নাম নিবন্ধন করে এসএমএস-এর মাধ্যমে ভেকসিন নিয়েছেন, নিচ্ছেন। এবার নিলেন সবচেয়ে কঠোর(!) সমালোচনাকারী রিজবী সাহেব।
 
সরকারকে চাপে ফেলতে দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বিএনপি ভেকসিন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগাম সমালোচনা শুরু করে। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে তারা ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি উত্তপ্ত করারও চেষ্টা করে। দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে ভ্যাকসিনের মজুদ শেষ পর্যায়ে আসার পর আবারও এ নিয়ে সমালোচনা ব্যস্ত থাকে তারা। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাধানে তার দল এবং সরকার জনগণের পাশে থেকে ভ্যাকসিনসহ সকল সমস্যার সমাধান করে আসছেন। বলা চলে ভ্যাকসিন ইস্যুতে দেশের মানুষ শেখ হাসিনা এবং সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছে। 
 
টিকা নিয়ে রাজনীতি না করার কথা বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ এই লেখার প্রেক্ষিতও রাজনীতি নিয়ে নয়। সময়ের প্রয়োজনে আমাদের কতিপয় রাজনীতিবিদের দেশের ক্রান্তিকালে জনগণের সংকট মোকাবেলায় না এসে, তাদের রাজনৈতিক উদাসীন ‘মন্তব্য’ তুলে ধরা আমার এই লেখার প্রয়াস। আগামীতে যারা দেশ শাসনের কথা ভাবছে, যারা একসময় জনগণের শাসক ছিলেন তাদের মুখে এহেন ‘বচন’ আমাদের হতাশ করে। 
 
করোনা মহামারীর মধ্যেই দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে রাজধানীতে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই শঙ্কার বার্তা দিচ্ছে ডেঙ্গু। করোনার পাশাপাশি এখন সতর্ক হতে হবে ডেঙ্গু নিয়েও। তা নাহলে আবারও শুনতে হবে এ ধরনের রিজভী ‘বচন’।
 
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK