বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ১৫:৫৭
ব্রেকিং নিউজ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ- গৌরবোজ্জ্বল জয়যাত্রায় চার দশক

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ- গৌরবোজ্জ্বল জয়যাত্রায় চার দশক

অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ- এ শব্দগুলো ইতিহাসে অঙ্গাঙ্গীভাবে উচ্চারিত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির আলোচনা কখনও পূর্ণাঙ্গ হয় না। বাঙালি মানসে নাম তিনটি বলতে গেলে প্রায় সমার্থক। বাংলাদেশের রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সমসাময়িক সময়ে উল্লিখিত নামের সাথে আরও একটি নাম সূর্যের মতো উজ্জ্বল। তিনি আর কেউ নন- বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার বাতিঘর জননেত্রী শেখ হাসিনা।
 
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৭২ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের রূপকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্র ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অবদান। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর জাদুকরি নেতৃত্বে বাংলাদেশ অল্প সময়ে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়। সেই সময় স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা মরণ আঘাত হানে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতির বুকে চেপে বসে সামরিক শাসক ও স্বৈরতন্ত্রের জগদ্দল পাথর। শুরু হয় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। খুনি মোশতাককে অপসারণ করে পর্দার পেছন থেকে নাটকের মূল কুশীলব জেনারেল জিয়া বেরিয়ে আসে। অবৈধ পন্থায় দখল করে ক্ষমতা। স্বৈরতন্ত্রকে চিরস্থায়ী করতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করা হয়। নেতাদের চরিত্র হনন ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে বিরাজনীতিকরণের এক সর্বগ্রাসী খেলায় মেতে ওঠে জেনারেলরা। ঠিক সে-সময়ে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
 
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাপ্তাহিক ‘নিউজ উইক’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- “যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য বলে আমি বিবেচিত মনে করি, তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রতিটি মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে জনগণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিই সম্মান দেখিয়েছেন। আমি তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।” [নিউজ উইক, ১১ মে ১৯৮১]
 
ঐ বছরের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশে ফিরে আসেন। তার আগমনে আশাহত বাঙালির মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়। মানুষ খুঁজে পেল তার এগিয়ে চলার পথ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২ বছরের সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও গৌরবের অগ্রযাত্রার ৪০ বছর ধরে নেতৃত্বে আছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ে দেশের রাজনীতিতে তিনিই প্রাসঙ্গিক, তিনিই অনিবার্য এবং অপরিহার্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার শোককে শক্তিতে পরিণত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ দেশ গড়ার নবতর লড়াইয়ে দৃপ্তপদে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চার মেয়াদে সরকার পরিচালনায় বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তার সাহসী নেতৃত্বে বিশ্বসভায় গড়ে উঠেছে বাঙালি জাতির এক নতুন ইমেজ। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ আজ আত্মমর্যাদাশীল জাতি। তার হাত ধরেই বাঙালির মুকুটে যুক্ত হচ্ছে এক একটি বিজয়ের পালক।
 
স্বৈরতন্ত্রের অবসান
বঙ্গবন্ধু-কন্যা যখন স্বদেশভূমিতে ফিরে আসেন, কেমন ছিল বাংলাদেশ? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। সেনাশাসক জিয়া তাদের ক্ষমা করে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। ক্ষমতায় অংশীদার করে। তাদের গাড়িতে-বাড়িতে জাতীয় পতাকা শোভা পায়। ’৭৫-এর খুনিরা দোর্দ- প্রতাপে ঘোরাফেরা করে। দম্ভ করে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে। জাতীয় সংসদে তাদের বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ-রকম ঘোর অন্ধকার অমানিশায় আলো হাতে আঁধারের যাত্রী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা এক অকুতোভয় লড়াই-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সামরিক শাসকরা জনগণের মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে। সংবিধানকে যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া করে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র পাল্টে দেয়।
 
বেসামরিক লেবাসে সেনা ছাউনির পৃষ্ঠপোষকতায় গঠন করা হয় রাজনৈতিক দল। এসবের বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান হয়। প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএনপি-জামাতের গোপন ষড়যন্ত্রে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলেও সংসদীয় গণতন্ত্র বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিয়া-এরশাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হতে থাকে পুরনো স্বৈরতন্ত্রের ধারায়। মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনমূলক একদলীয় নির্বাচনসহ সকল অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। অবসান হয় ২১ বছরের দুঃসহ স্বৈরতন্ত্রের।
 
আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ
দীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় পুনঃপ্রত্যাবর্তনের ফলে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সূচিত স্বৈরশাসক, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধারার অবসান হয়। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করা হয়। ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ভ্রাতৃঘাতি রক্তপাত বন্ধ করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচনে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নেওয়া হয় বহু সৃজনশীল প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করে। বিশ্বসভায় গড়ে ওঠে বাঙালি জাতির নতুন ইমেজ। আওয়ামী লীগের এই পাঁচ বছরের শাসনামল জাতীয় ইতিহাসের সুবর্ণ সময় হিসেবে চিহ্নিত।
 
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম
বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলো তারা যখনই আলোর পথে এগুতে থাকে তখনই অন্ধকারের শক্তি পথ আগলে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় দমন-পীড়ন-সন্ত্রাস, ভোট কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বিএনপি-জামাত জোট। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এ-সময় তারা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, শ্রমিক নেতা আহসানউল্ল্যাহ মাস্টার, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হয় সংঘালঘু সম্প্রদায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নেতৃত্বে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, সৃষ্টি হয় জনজাগরণের। বিএনপি-জামাত জোট ও তাদের আজ্ঞাবহ রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বঘোষিত উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিনের কর্মকাণ্ডের ফলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পটপরিবর্তন সংঘটিত হয়। ১/১১-এর পরিবর্তন যেমন বিদ্যমান সংকট মোচনের পথ উন্মুক্ত করে তেমনই বিনা অপরাধে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে ফেলে। বিএনপি-জামাত জোট, খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের অপরাধকে আড়াল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন মানুষ মানতে পারেনি। তীব্র জনমত এবং শেখ হাসিনার আপোসহীন ভূমিকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ২০০৮-এ বিপুল বিজয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
 
উন্নয়নের পথে অবিরাম
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবারের সরকার পরিচালনা করছে। এ-সময় বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে বিস্ময়কর উন্নত সাধিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক হালিস বি শেনারি বাংলাদেশকে নিয়ে অসম্মানজনক উক্তি করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের আয় ৯০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১২৫ বছর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার মার্কিন সেই অর্থনীতিবিদের কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে। এই করোনা মহামারিকালে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ কখনোই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না- উল্লেখ্য করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সাথে তুলনা করেছিলেন। সেই বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতায় পৃথিবীর অন্যতম দেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির মতে, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ান স্ট্রিট জার্নাল বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতির দেশ বলছে। করোনা মোকাবিলায় অসাধারণ নেতৃত্বের জন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী নেত্রী শেখ হাসিনা।
 
 
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার ‘ভারত : উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ শীর্ষক বইয়ে গড় আয়ু, শিশুমৃত্যু হার, টিকা কার্যক্রম, স্কুল শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন- ‘অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।’ অর্থনীতির সকল সূচকেই বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩০০ গুণ। বিএনপি-জামাত আমলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থবছরে ১০ গুণের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হয়েছে। করোনা মহামারির এই সংকটময় সময়েও দেশরত্ন শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
 
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু ছিল না। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো জঙ্গি আইন দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিত করে বিচারের পথ উন্মুখ করে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মানদণ্ডে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ছিল চ্যালেঞ্জের। বিএনপি-জামাত এই বিচার কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। রায়ের দিন হরতাল পর্যন্ত দিয়েছে। জাতিকে দায় ও কলঙ্কমুক্ত করার জন্য এই রায় যুগান্তকারী। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার সাহস ও বিচক্ষণতা আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কারণে শহিদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো আজ সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে। হত্যা-খুন-সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
 
আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি রচনা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিশ্ব দরবারে বাঙালিকে বীরের জাতির মর্যাদা দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে খুনিরা বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি। তারা যেন মানুষের অমিত সম্ভাবনাকেও হত্যা করেছিল। ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে- এটা যেন মানুষ বিশ্বাস করতেও ভয় পেত। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতিকে আত্মমর্যাদায় ফিরিয়ে এনেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে মানুষের মনে আস্থা ও বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে- আমরাই পারি, আমরাই পারব।
 
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ‘মুজিববর্ষ’ ও ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উদযাপন। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন থেকে শুরু করে বছরজুড়ে নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে মুজিববর্ষের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কর্মসূচির মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান চলবে। ইতোমধ্যে অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেমের শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে- এটাই মুজিববর্ষের শিক্ষা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৫০ বছর উপলক্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মূল আকাক্সক্ষা ‘ক্ষুধা-দারিদ্র্য-শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
 
জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাধা-বিপত্তি-ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে তিনি লক্ষ্যে অবিচল। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সফল করতে পরিশ্রম করছেন অহর্নিশি। জাতির পিতার শাহাদাতবরণের পর যেন মুক্তির দূত হিসেবে তার আগমন। শেখ হাসিনা আছেন বলেই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। মানুষ উন্নত জীবন পাচ্ছে। তিনি আছেন বলেই খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ খাদ্য উদ্বৃত্তের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তেই আজ পদ্মাসেতু দৃশ্যমান। বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইট ও টানেলের যুগে প্রবেশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত উন্নত কল্যাণকামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় দেশবাসীর আস্থা ও সমর্থন শেখ হাসিনার এগিয়ে যাওয়ার পাথেয়। আজ এ-কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়- শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, বাংলাদেশের নেতৃত্বেও শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্ব মানেই শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা।
 
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK