উত্তরণবার্তা লাইফস্টাইল ডেস্ক : স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক আলোচনায় প্রায়ই ‘এন্টিঅক্সিডেন্ট’ নামক শব্দটি শোনা যায়। কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই জানেন এটা আসলে কি। এই আর্টিকেল আমি আপনাদের বলব এন্টিঅক্সিডেন্ট কিন এবং কেন এটা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যাবশ্যক। এন্টিঅক্সিডেন্ট হচ্ছে এক ধরনের পদার্থ যা আমাদের শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিকেলের (Free radical) ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ প্রতিহত হয়। ফ্রি র্যাডিকেল হচ্ছে খুব ক্ষুদ্র অণু যা উৎপাদিত হয় যখন আমাদের দেহ খাবারকে ভেঙ্গে ফেলে বা আমরা সিগারেটের ধোয়া বা বিকিরিণের সংস্পর্শে আসি। শরীরে উচ্চ মাত্রার ফ্রি র্যাডিকেল দেখা দিলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
আমাদের শরীর তার নিজস্ব এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিকেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে, এন্টিঅক্সিডেন্ট খাবারেও পাওয়া যায় যেমন ফলমূল, শাকসব্জি এবং অন্যান্য উদ্ভিদজাত খাদ্যে। বেশ কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি, এবং ভিটামিন ই খুব কার্যকরি এন্টিঅক্সিডেন্ট।
ফ্রি র্যাডিকেল কিভাবে কাজ করে?
আমাদের শরীর সবসময়ই ফ্রি র্যাডিকেল উৎপাদন করে থাকে। শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট না থাকলে তা আমাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করত এবং মৃত্যুও ঘটাতে পারত। অন্যদিকে, ফ্রি র্যাডিকেল স্বাস্থ্য রক্ষায়ও কাজ করে। যেমন, আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংক্রমণ রোধ করতে ফ্রি র্যাডিকেলদের ব্যবহার করে। এই জন্য শরীরে ফ্রি র্যাডিকেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্য বজায় রাখা উচিৎ।
শরীরে যখন এন্টিঅক্সিডেন্টের তুলনায় বেশী ফ্রি র্যাডিকেল হয় তখন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (Oxidative stress) নামক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বেশী সময় ধরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস চললে এটা ডিএনএ ও শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি করতে পারে এবং কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। ডিএনএ ড্যামেজ হলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং বিজ্ঞানীদের মতে এটা বার্ধক্য ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জীবনধারা, মানসিক চাপ ও পরিবেশের কারণে শরীরে অতি মাত্রায় ফ্রি র্যাডিকেল হতে পারে এবং তা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের সৃষ্টি করতে পারে, যেমন
-
পরিবেশ দূষণ
-
সিগারেটের ধোঁয়া
-
মদ্যপান
-
টক্সিন
-
উচ্চ মাত্রার ব্লাড সুগার
-
বেশে মাত্রায় পলি আনস্যাচুরেটেড যুক্ত খাবার খেলে, যেমন – আখরোট; তিসির বীজ বা তেল; সানফ্লাওয়ার সিড (সূর্যমুখী ফুলের বীজ); স্যামন, টুনা, ম্যাকারেল ইত্যাদি মাছ; অলিভ অয়েল, সয়বিন তেল, ইত্যাদি
-
ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস বা ভাইরাসের সংক্রমণ
-
বেশি মাত্রায় লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, কপার বা জিঙ্ক যুক্ত খাবার খেলে
-
শরীরে খুব বেশী বা খুব কম অক্সিজেন থাকলে
-
লম্বা সময় ধরে ব্যায়াম করলে, যা শরীরে টিসুর ক্ষতি করে
-
বেশী মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খেলে, যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন ই
কোন কোন খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে?
আমাদের শরীর গ্লুটাথিওন (glutathione) নামক তার নিজস্ব এন্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদন করে। শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকা খুবই জরুরি। কিছু কিছু এন্টি অক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই এর উপর আমাদের জীবন নির্ভর করে। উদ্ভিতজাত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে এন্টি অক্সিডেন্ট।
যেসব খাবার এন্টিঅক্সিডেন্টের জন্য সুখ্যাতঃ
-
ডার্ক চকোলেট
-
ব্লুবেরি
-
স্ট্রবেরি
-
বেদানা
-
গ্রিন টি
-
কফি
-
ব্রকলি
-
লাল বাঁধাকপি
-
বিন (কিডনি বিন, মটর শুঁটি, ইত্যাদি)
-
বিট
-
পালং শাক
মাংস, এবং মাছেও এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে তবে ফলমূল ও শাকসব্জির চেয়ে কম মাত্রায়। হলুদ এবং এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়লেও আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট।
এন্টি অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট
সাপ্লিমেন্ট হিসেবে এন্টিঅক্সিডেন্ট খাওয়ার প্রয়োজন নেই। শরীরে বেশী মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকাটা অস্বাস্থ্যকর। সাপ্লিমেন্ট হিসেবে না নিয়ে সবসময় এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। যদি কোন সাপ্লিমেন্ট খেতে চান তবে মাল্টি ভিটামিন খাওয়াটা নিরাপদ।
লেখক : সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
চিকিৎসাশাস্ত্র ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক, ব্লগার, এবং শিক্ষানবিশ কৃষক